একটি ইনিংসের পরিসমাপ্তি

পৃথিবী একটা রঙ্গমঞ্চ। যার পরতে পরতে আছে অসংখ্য ঘটনা। আর তা যদি হয় কোন মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প তবে তো সেই মঞ্চে নাটকের কোন অভাব হয় না। সেই মধ্যবিত্ত পরিবারের এক দরন্ত ক্রিকেট পাগল ছেলে হল রাহুল। মধ্যবিত্ত পরিবারের কঠিন বাস্তবতার মাঝেও তার জীবনের সব কিছু যেন ক্রিকেট । ক্রিকেট ছাড়া যেন অন্য কিছু চিন্তা করতে পারে না। তার এই চিন্তা ভাবনার মাঝে আছে অনেক মহান মহান ক্রিকেটার। যাদের ক্রিকেট যাদু দেখে আজ সে ভদ্র লোকের খেলা ক্রিকেটের পাগল প্রেমিক। ছোট বেলা থেকেই তার ক্রিকেট এর উপর অন্য রকম আকর্ষণ। এই আকর্ষণ বলই তাকে করে তুলেছে বিশেষ প্রতিভাব অদিকারী। শুধু ব্যাটিং বা বোলিং নয়, সে ছিল ক্রিকেট এর জ্ঞান ভাণ্ডার। প্রতিটা বিভাগে সে ছিল সমান ভাবে দক্ষ। মানুষ চেষ্টা করলে যে সব কিছু পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সে।

তার দিনের শুরু আর শেষ দুইটাই হতো ক্রিকেট দিয়ে। তবে শুরু আর শেষ কখনোই এক জায়গায় হতো না । কখনও এলাকায় আবার কখনও বিদ্যালয়রে মাঠে। বাড়ির ফাঁকা সময়ও তার যেতো নিজের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে। পরিবারের সবাই যে তার পাশে ছিল এইটা ভাবা একদম বোকামু। মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছ থেকে এইটা আশা করা যায় না। তাকে সব বাঁধা অতিক্রম করে এইটা করতে হতো। কারণ তার স্বপ্ন যে ছিল একটাই , কোন একদিন সে অনেক বড় মানের একজন ক্রিকেটার হবে।

ছোট থেকে বড় হওয়া যে শুধু একটা কাজের মধ্যেই সীমা বদ্ধ নয়। তাই তো তাকে সব কিছু একসাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হতো। পড়া লেখে যেমন করতে হতো তেমনি তাকে তার স্বপ্নের পিছনে সময় দিতে হতো। তার এই স্বপ্নের শুরু প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তার এই স্বপ্নের জন্য তার বিদ্যালয় থেকে কলেজ পর্যন্ত ছিল প্রশংসা । এইটা তো আর একদিনে অর্জন করা যায় না। আমাদের মাশরাফি তো আর একদিনে ম্যাশ হয়নি। তাকে করতে হয়েছে অনেক পরিশ্রম। তেমনি তার এই জায়গায় আসতে অনেক পরিশ্রম ও বাঁধা পার করতে হয়েছে।

প্রিয় খেলার হাতেখড়িটা ছিল অনেক কষ্টের এবং অবজ্ঞার। দিনের পর দিন তাকে মাঠের বাহিরে বসে থাকতে হয়েছে এবং বড় ভাইদের বল কুড়াতে হয়েছে। শত কষ্টের বিনিময়ে দিন শেষে অর্জন শুধু কিছু সময় ব্যাট করার সুযোগ। এভাবেই কাটতো দিনের পর দিন। এই অল্প সুযোগ তাকে করে তুলেছিল অনেক প্রতিভার অধিকারী। এই জন্যই জ্ঞানী জনেরা বলেছেন “কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে”। এভাবেই শুরু হয় এক মধ্য বিত্ত পরিবার থেকে আসা এক সাধারণ ছেলের প্রথম ক্রিকেট অধ্যায়ের সূচনা। সূচনা যেমনই হোক না কেন, তার পরের দিন গুলা ছিল অনেক মধুর। কোন দিনই তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি । তাকাতেই বা হবে কেন, তার তো কোন কিছু হারানোর নাই। এখন তো শুধু অর্জন এর অধ্যায় । যার কোন কিছু থাকে না, তার কি আর হারানোর কোন ভয় আছে।

আর দশটা ছেলে মেয়ের মতো তাকে তার বাবা মা তাকে ভর্তি করে দিলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুধু খেলা ধুলা করলেই তো আর চলবে না। সব কিছু একসাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই খানে এসেও পূর্বের মতো অবস্থা। কেউ তাকে সুযোগ দিতে চায় না। তবে একদিনের সুযোগ সব কিছু পরিবর্তন করে দিলো। সে হয়ে গেল সকলের মধ্যমণি। তার বন্ধুগুলা তাকে ছাড়া ক্রিকেট ভাবতেই পারে না । প্রতিভার একটা দাম আছে না। সে যে অনেকের চেয়ে ভাল খেলে এবং ভাল খেলা বুঝে। শিক্ষকদের অনেক বাধাও তাদের খেলাকে বন্ধ করে রাখতে পারেনি। তারা তো এখন দুর্বার। তাদের কি আর নিয়মের বেড়াজালে বেধে রাখা যায়। এভাবেই চলে যায় তার এই স্কুল। সবাইকে ছেড়ে আবার নতুন জায়গায় যাওয়ার সময় যে তার হয়ে গেছে।

এর পরে সে ভর্তি যুদ্ধ জয় করে ভর্তি হয় উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই খানে বিশাল মাঠ থাকা শর্তেও তার খেলার সুযোগ হয় না। আবার শুরু হয় অপেক্ষার । প্রায় দুই বছর অপেক্ষার পরে তার আবার সুযোগ আসে। তবে এই বারের সুযোগ যেন, তাকে অনেক কিছু অর্জনের আভাস দেয়। কেনই বা দিবেনা, প্রথম দিনেই যে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। পর পর তিন উইকেট নিয়ে হয়ে যায় ক্রিকেটের নায়ক। এর পরে সে হয়ে যায় স্কুলের দলের নিয়মিত খেলোয়াড়। কিন্তু এই খানেও যেন অন্য রকম মজা ঘটে, তাকে সবাই পেস বলার হিসাবে চিনে। ঢাকা পরে যায় তার ব্যাটিং যাদু। আর কোন দিনই স্কুলে দেখানো হয়নি তার হাতে কি যাদু আছে। সে যে অনেক কিছু দিতে চেয়েছিল ভদ্র লোকের খেলাকে। সে অপেক্ষায় থাকে তার প্রতিভাকে সবার সামনে তুলে ধরতে, তবে সে পারেনি। তবে তার না পারার পিছনে হয়তো ছিল কঠোর বাস্তবতা।

তবে সব বাঁধা অতিক্রম করে চালিয়ে যাচ্ছিল তার স্কুল এবং এলাকার হয়ে খেলা। এই দিকে এলাকায় সে কোন দিন তার বোলিং যাদু দেখাতে পারেনি। কারণ তাকে যে অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে হতো। সে যে ছিল উইকেট রক্ষক। এই বিভাগেও ছিল তার অসাধারন প্রতিভা। আর এই খানে তার রোল মডেল ছিল ” মঈন খান” । বোলার কে দিক নির্দেশনা দেওয়ার মতো ভাল যে কেউ ছিল না। কখন কি করতে হবে এইটা তার থেকে কে আর ভাল পারবে। কারণ ক্রিকেট যে তার স্বপ্ন। ক্রিকেট এর উপর দক্ষতা থাকায় সে ছিল সবার কাছে সুপরিচিত।

ম্যাচ পরিচালনা করার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হতো দূর-দূরান্তে। আর এই কাজের ভার পেয়েছিল তার ক্রিকেট এর উপর ভালোবাসা থেকে অর্জিত অপরিসীম জ্ঞান আর সততা থেকে। তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত ছিল নিখুঁত এবং সকলের চোখে পরার মতো। এই ভাবে তার দিন ভালই কাটছিল।

তবে কঠোর বাস্তাবতার কাছে একদিন সে হার মেনে যায়। কোন কিছুকেই সে আর আগের মতো করে সময় দিতে পারে না। তাকে যে জীবনে অনেক কিছু করতে হবে, অনেক বড় হতে হবে। এই একটা কারনেই সে তার স্বপ্নকে আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যেতে দেখে। এখনও সে ক্রিকেট কে ভালোবাসে, ভালোবাসে তার স্বপ্নের খেলাকে, ভালোবাসে তার প্রতিভাকে, ভালোবাসে ভদ্র লোকের খেলাকে।

21830cookie-checkএকটি ইনিংসের পরিসমাপ্তি