ধর্ষিতার মা

লকলকিয়ে উঠছে আগুন, ঘি নয়
কেরোসিন। চিতায় জ্বলছে নাবালিকা
মেয়ে আমার। কুসুম। অঘ্রানে আঠারো
পেরোলেই ওর বিয়ে দেব। স্বপ্ন ছিল।
জমি জিরেত যা ছিল লালার কাছে তা
কবেই পড়েছে বাঁধা।
লাল বেনারসি, কুমকুম চন্দনের
সাজ পেলি না বলেই লাল আগুনের
আড়াল ঢেকেছে তোর লজ্জা ঢাকা মুখ
কয়লার মতো কালো দেহ। বিবসনা
খবরের শিরোনামে তুই আজ লাশ!
ধর্ষিতার পোড়া গন্ধ আকাশে বাতাসে!

আমারই সামনে দিয়ে, ছেলেগুলো টেনে
নিয়ে গেছে ওকে চুলের গোছ হেঁচড়ে।
মুখর হইনি প্রতিবাদে সেই দিন
অভাগা মা বাপ তোর, ভয়েতে নিশ্চুপ!
কুসুমের মাংস পিণ্ড খেলো অন্ধকার
প্রহরে প্রহরে জান্তব আক্রোশে একে
একে সারা রাত ধরে তারিয়ে তারিয়ে
উপভোগ করে কুসুমের অসহায়
ভীরু আর্তনাদ! শুনেও শোনেনি যারা
সে কান্না ভেদ করেনি কারো কর্ণ দ্বার!
বন্ধ ঘর অন্ধকারে পাড়া প্রতিবেশী
ভয়ে ছিল মূক। নিচু জাত মেয়ে তোর
রক্তের কষাটে স্বাদ টাই বেশ, তাই
নখের আঘাতে ছিঁড়ে চেখে দেখেছিল
গোপন অঙ্গ বিশেষ ক্রমান্বয়ে ধীরে।
যতক্ষণ প্রাণ থাকে দেহে।

আঘাতে বিক্ষত লাশ, ধর্ষিতার শেষ
আগুনেই গিলে নেয় তার পরিশেষ
কাতর স্বরের মৃদু অনুনয় মা’র
শোনেনি সেদিন। একা একা হলি ছাই।

এই তো প্রথম হয়নি তার ধর্ষন
ধর্ষিতা হয়েছে সে যে বারংবার
কখনো দিনে দুপুরে লালার চোখের
লালসায় কখনো বা গাঁয়ের জোৎদার
কখনো সেই লালায় মিশে ছিল মেকি
ভালোবাসা কিংবা যেচে দেয়া উপহার…
ক্ষমতার দম্ভে রাঙা বিবেক আগল
ভাঙা ছিল কবে। ভোটরঙ্গ ছিল ছল।

সামান্য সুযোগে হেসে রক্ষকের বেশে
ছোবল দিয়েছে নারী মাংসে বিনা ক্লেশে
সঙ্গী নেতা-প্রশাসন, মন্ত্রী ও আমলা
আর ওপরওয়ালা! জঙ্গলে-সড়কে
গোপনে-প্রকাশ্যে, ধর্ষন ধর্ষন খেলা
চলে রোজ, দিন প্রতিদিন। মানবতা
দিশাহীন, চেতনায় ধোঁয়া! ধর্ষিতার
জন্য তোলা ভ্রূকুটির ঢেউ, প্রশ্ন চিহ!

বহুরূপী ধর্ষকেরা ভেক ধরা সাজে
বসেছে নায়ক হয়ে সমাজ চূড়ায়
প্রতিবাদী মুখ আজ ধর্ষকের ছাতা
অসহায় নারী তাই, নেই পরিত্রাতা।
আট, আশি, অষ্টাদশী রক্তাক্ত সবাই
তবু অন্ধ সমাজের কৌতুক আচার
নগ্ন করে প্রশ্ন বাণে বিদ্ধ হয় নারী
পোড়া দেশ চেটে খায় ধর্ষিতার মান।
অসহায় হতে হতে হয়েছি নাচার
কবে পাব পরিচয় সঠিক বিচার…

তার দরবারে কোনো ফাঁকি নেই মানি
ধর্ষকের বিচার হবে সেই দিন জানি।

——————————
রচনায়: রুমা ব্যানার্জি, ভারত।

24420cookie-checkধর্ষিতার মা