ঠিকানা

ও মেয়ে তুই কখন মেয়ে থেকে হলি মা
সারাদিনের পরিশ্রমে জানতে পারলি না।
দশটি মাস দশটি দিন রাখলি ধরে পেটে,
যন্ত্রনায় ছটফটিয়ে হল তোর ছেলে।
ভুমিষ্ট হয়েই তোর ছেলে কাঁদছে কোঁকিয়ে
প্রসববেদনা ভুলে তুই কোলে নিলি তুলে।

ও মেয়ে তুই কখন মেয়ে থেকে হলি মা
সারাদিনের পরিশ্রমে জানতে পারলি না।

তোর বুকের দুধ খেয়ে, ছেলে দিচ্ছে কেমন হামা
তুই যে কি খাস — কেউ জানতে চায় না।
তোর ওই একরাশ চুলে —- হয়েছে কাকের বাসা
আলু থালু পোশাক তোর— কি হয়েছে দশা।
বাড়ীতে আছে কত লোক কোথায় কেবা জানে
রান্নাঘরে উনুনধারে তোর ঠিকানা ঠিক আছে।

তোর বুকেতে উলটে পালটে করছে ছেলে খেলা,
তোর হাত ধরে শিখলো ছেলে হাটিহাটি পাপা।
হাঁটতে শিখে হটাৎ…. ছেলে কখন হয়ে গেলো বড়
চারপাশেতে বন্ধুবান্ধব কতই যে তার হল।

ও মেয়ে এবার তোর নেই প্রয়োজন — বৃথাই হলি মা,
তুই যে এত করলি কষ্ট, কেউ জানতে পারলো না।
এবার ছেলে ঘরে নিয়ে এল, লাল টুকটুকে বউ-
তোর রান্নাঘরের ঠকানা টা খোঁজ দিলে না কেউ।

এইভাবেতে গেলো তোর অনেক কটা দিন–
ভাঁঙতে ভাঁঙতে শরীররটা তোর হল বড়ো কাহিল।
অবশেষে একদিন তোর…..খোঁজ খোঁজ খোঁজ–
ছেলের বউ বললে আমার শাশুড়ি নিখোঁজ।

কাজের মাসি খবর দিলে ওগো ছেলের বৌ–
শাশুড়ি পড়ে আছে রান্নাঘরে, তোমরা জানলেনা কেউ?
হুরমুরিয়ে সকলে তখন এলো রান্নাঘরে,
ছেলে তখন মা মা করে কাঁদছে বুকের পরে।
শেষ নিঃশ্বাস ফেললো মা, ছেলের পানে চেয়ে

ও মেয়ে? তুই মেয়ে থেকে হলি মা
সবাই সেই ঠিকানা জানলো এতদিনে।

 

—————————–

রচনায়: মিত্রা মুখার্জি, ভারত।

26310cookie-checkঠিকানা